Back to hellosaad.com
A Project by HelloSaad.com

ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন: পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা

আইনি জটিলতা, নামজারি, দলিল যাচাই এবং ডিজিটাল ভূমি সেবার কমপ্লিট গাইডলাইন। জানুন আপনার অধিকার, রক্ষা করুন আপনার সম্পদ।

জমি কেনার ধাপগুলো দেখুন

মৌলিক পরিভাষা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে যা জানা বাধ্যতামূলক

১. দলিল (Deed)

সহজ কথা: দলিল হলো জমি কেনা-বেচার প্রধান প্রমাণপত্র। এটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয়।

প্রকারভেদ:
সাব-কবলা (Sale Deed): টাকা দিয়ে জমি কিনলে এই দলিল হয়। এটি সবচেয়ে শক্তিশালী।
হেবা দলিল (Gift Deed): রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়কে (বাবা-ছেলে, স্বামী-স্ত্রী) বিনামূল্যে জমি দিলে এটি হয়। খরচ খুব কম।
বণ্টননামা: ওয়ারিশদের মধ্যে পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ করার আইনি দলিল।

💡 টিপস: জমি কেনার আগে বিক্রেতার 'ভায়া দলিল' (সে কীভাবে মালিক হলো) যাচাই করা বাধ্যতামূলক।

২. খতিয়ান বা পর্চা (Record)

সহজ কথা: সরকার জরিপ করে কার কতটুকু জমি আছে, তার যে তালিকা তৈরি করে, তাকে খতিয়ান বলে। এর কপিকে 'পর্চা' বলে।

গুরুত্বপূর্ণ শব্দ:
দাগ নম্বর: মৌজার ম্যাপে জমির প্লট নম্বর।
খতিয়ান নম্বর: একজন মালিকের মোট জমির হিসাব যে ফাইলে থাকে তার নম্বর।

⚠️ সতর্কতা: দলিলে মালিকানা থাকলেও, খতিয়ানে নাম না থাকলে সরকার আপনাকে মালিক হিসেবে চিনবে না।

৩. নামজারি (Mutation)

সহজ কথা: জমি কেনার পর আগের মালিকের নাম কেটে সরকারি খাতায় আপনার নাম তোলাই হলো নামজারি বা মিউটেশন।

কেন করবেন?
১. নিজের নামে খাজনা দেওয়ার জন্য।
২. জমিটি পরবর্তীতে বিক্রি করার জন্য।
৩. ব্যাংক লোন পাওয়ার জন্য।

🌐 বর্তমানে ঘরে বসেই 'ই-নামজারি' করা যায়। সময় লাগে সর্বোচ্চ ২৮ দিন।

৪. খাজনা (Land Tax)

সহজ কথা: জমি ব্যবহারের জন্য সরকারকে বছরে একবার যে ট্যাক্স দিতে হয়, তাকে ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা বলে।

দাখিলা: খাজনা দেওয়ার পর যে রসিদ পাওয়া যায়, তাকে 'দাখিলা' বলে। এটি মালিকানার অন্যতম বড় প্রমাণ।

📅 ৩ বছরের বেশি খাজনা বকেয়া থাকলে জমি নিলামে ওঠার ঝুঁকি থাকে।

৫. মৌজা ও তফসিল

মৌজা: জরিপ করার সময় একটি এলাকাকে ছোট ছোট ইউনিটে ভাগ করা হয়, একেকটি ইউনিটকে মৌজা বলে (গ্রামের মতো)।

তফসিল (Schedule): জমির পূর্ণাঙ্গ পরিচয়। যেমন—জেলা: ঢাকা, থানা: সাভার, মৌজা: গেন্ডারিয়া, খতিয়ান: ১১২, দাগ: ৩৫০, জমির পরিমাণ: ৫ শতাংশ।

৬. উত্তরাধিকার (Inheritance)

সহজ কথা: কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ইসলামি শরিয়াহ বা নিজস্ব ধর্মীয় আইন অনুযায়ী বণ্টন করা।

ফারায়েজ: মুসলিম আইনে সম্পত্তি ভাগ করার গাণিতিক নিয়ম। বাবা মারা গেলে স্ত্রী, পুত্র ও কন্যারা নির্দিষ্ট অনুপাতে জমি পায়।

📝 ওয়ারিশ সনদ: এটি স্থানীয় চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলর অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হয়।

২. জমির রেকর্ডের ইতিহাস ও ধরণ

কোন্ রেকর্ডটি কখন তৈরি হয়েছে এবং কোনটি আপনার কাজে লাগবে?

CS (১৯০৮-১৯৪০)

Cadastral Survey (সি.এস)

ব্রিটিশ আমলে করা প্রথম এবং সবচেয়ে নিখুঁত জরিপ। এটিই জমির আদি রেকর্ড। সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তিতে আদালত এখনো সি.এস রেকর্ডকে ভিত্তি হিসেবে ধরে।

SA (১৯৫০-১৯৬৩)

State Acquisition (এস.এ)

জমিদারি প্রথা বাতিলের পর জমিদারদের থেকে প্রজাদের নামে জমি হস্তান্তরের রেকর্ড। সরেজমিনে না গিয়ে টেবিলে বসে তৈরি করায় এতে ভুলের পরিমাণ বেশি।

RS (১৯৬৫-চলমান)

Revisional Survey (আর.এস)

এস.এ রেকর্ডের ভুল সংশোধনের জন্য এই জরিপ করা হয়। জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে বর্তমানে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স।

BS/City (বর্তমান)

Bangladesh Survey / City Jarip

স্বাধীন বাংলাদেশে আধুনিক জরিপ। ঢাকা মহানগরে এটি 'সিটি জরিপ' নামে পরিচিত। জমি কেনার আগে 'হাল রেকর্ড' হিসেবে এটি যাচাই করা বাঞ্ছনীয়।

৩. জমি মাপজোকের সহজ হিসাব

আমিন বা সার্ভেয়ার ছাড়াও নিজেই জানুন আপনার জমির পরিমাণ

একক রূপান্তর তালিকা

একক বর্গফুট / পরিমাণ ব্যবহার
১ শতাংশ (Decimal) ৪৩৫.৬০ বর্গফুট সর্বাধিক প্রচলিত একক
১ কাঠা (সরকারি) ১.৬৫ শতাংশ (৭২০ বর্গফুট) শহরাঞ্চলে ফ্ল্যাট/প্লটে ব্যবহৃত
১ বিঘা ৩৩ শতাংশ (১৬০০ বর্গগজ) কৃষি জমিতে ব্যবহৃত
১ একর ১০০ শতাংশ (প্রায় ৩ বিঘা) বৃহৎ সম্পত্তির ক্ষেত্রে

হিসাব বের করার সুত্র

১. ফিতা দিয়ে জমির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ফুট (Feet) এককে মাপুন।
২. দৈর্ঘ্য × প্রস্থ = ক্ষেত্রফল (বর্গফুট) বের করুন।
৩. প্রাপ্ত গুণফলকে ৪৩৫.৬০ দিয়ে ভাগ দিন।

ফলাফল = জমির পরিমাণ (শতাংশে)।

৪. জমি কেনা-বেচার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া (Step-by-Step)

প্রতারণা এড়াতে জমি কেনার আগে ও পরে করণীয় ধাপসমূহ

রেকর্ড যাচাই (Record Check):

বিক্রেতার নামে CS, SA, RS বা BS খতিয়ানে জমির রেকর্ড আছে কিনা ভূমি অফিস থেকে দেখুন।

দলিল ও মালিকানা যাচাই:

ভায়া দলিল (পিঠ দলিল) বা গত ২৫ বছরের মালিকানার ধারাবাহিকতা চেক করুন। বিক্রেতা কীভাবে মালিক হলেন তা নিশ্চিত হোন।

দখল যাচাই (Possession):

কাগজে মালিকানা থাকলেই হবে না, বিক্রেতা বাস্তবে জমিটির দখলে আছেন কিনা সরেজমিনে দেখুন।

বায়না চুক্তি (Bayna Deed):

সব ঠিক থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রির শর্তে একটি বায়না দলিল সম্পাদন করুন।

মূল দলিল রেজিস্ট্রি:

বাকি টাকা পরিশোধ করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে সাফ-কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করুন।

নামজারি আবেদন (Mutation):

দলিল হাতে পাওয়ার পর দ্রুত এসি ল্যান্ড অফিসে বা অনলাইনে নামজারির আবেদন করুন।

খাজনা পরিশোধ:

নামজারি খতিয়ান ও ডিসিআর পাওয়ার পর নিজ নামে হোল্ডিং খুলে খাজনা পরিশোধ করুন ও দাখিলা নিন।

দখল গ্রহণ:

জমিতে সাইনবোর্ড বা সীমানা প্রাচীর দিয়ে নিজের দখল নিশ্চিত করুন।

📂 জমির মালিকানায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

✅ মূল বিক্রয় দলিল ✅ বায়া/পিঠ দলিল (২৩-২৫ বছরের) ✅ সিএস/এসএ/আরএস/বিএস খতিয়ান ✅ নামজারি খতিয়ান ও ডিসিআর ✅ হাল সনের খাজনার দাখিলা ✅ ওয়ারিশ সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ✅ জমির স্কেচ ম্যাপ বা নকশা ✅ এনআইডি কপি

ডিজিটাল ভূমি সেবা (Digital Land Services)

অফিসে না গিয়ে ঘরে বসেই সরকারি সেবা নিন। প্রয়োজনীয় লিংকসমূহ:

মোবাইল অ্যাপ: প্লে-স্টোর থেকে 'ভূমিসেবা' অ্যাপ নামিয়েও সেবা নিতে পারেন।

কোর্স আউটলাইন (যা শিখবেন)

এই গাইডের বিস্তারিত মডিউলসমূহ